۲ آذر ۱۴۰۳ |۲۰ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 22, 2024
ইমাম রেযার (আ.)
ইমাম রেযার (আ.)

হাওজা / আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামগণ সময়োপযোগী পদ্ধতিতে বিদ্যমান সকল অব্যবস্থা বা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম চালাতে থাকেন।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪৮ হিজরির জ্বিলক্বাদ মাসের এগারো তারিখে এই ভূপৃষ্ঠে আগমণ করেন বিশ্বমানবতার মুক্তিকামী মহান পুরুষ, ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচনকামী কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী নেতা নবীবংশের দীপ্তিমান অষ্টম নক্ষত্র ইমাম রেযা (আ.) তার জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ।

নাম ও বংশ পরিচয় :

নাম : আলী।

পিতা : নবীবংশের সপ্তম ইমাম মূসা ইবনে জাফর (আ.)।

মাতার নাম :উম্মুল বানিন নাজমা।

উপাধি : তার অনেক উপাধি রয়েছে। এসব উপাধির মধ্যে বহুল পরিচিত কয়েকটি হলো আবুল হাসান,রেযা,সাবির,রাযি এবং ফাযিল। তবে তিনি রেযা নামেই অধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন।

নবীবংশের প্রত্যেক ইমামের জীবনই নিষ্পাপ ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ এবং শাহাদাতের মহিমায় উজ্জ্বল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভাষ্য অনুযায়ী ইমামদের জীবনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ বষয়টি হলো রাজনৈতিক সংগ্রাম। হিজরী প্রথম শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ইসলামি খেলাফত যখন সুস্পষ্টভাবেই রাজতন্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করে এবং ইসলামি নেতৃত্ব জোর- জুলুমপূর্ণ বাদশাহিতে রূপান্তরিত হয়, তখন থেকেই আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামগণ সময়োপযোগী পদ্ধতিতে বিদ্যমান সকল অব্যবস্থা বা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম চালাতে থাকেন। তাদের এইসব রাজনীতির বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল প্রকৃত ইসলামি সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং ইমামতের ভিত্তিতে হুকুমাত প্রতিষ্ঠা করা। বলাবাহুল্য কায়েমি স্বার্থবাদি মহলের সমূহ অত্যাচার-নিপীড়নের মুখেও তারা তাদের এই ইমামতের গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছেন। যার ফলে যেন শাহাদাতের পবিত্র রক্ত থেকে জন্মলাভকারী লালফুলে বাগানের পর বাগান ছেয়ে যাবার পরও ইমামতের সেই ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে এবং তাদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাদের

যোগ্য উত্তরসূরিগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আজো তৎপর রয়েছে। ইমামতের প্রদীপ্ত আলোয় উদ্ভাসিত পৃথিবী তাই তাদের যথার্থ দিক-নির্দেশনায় খুঁজে পাচ্ছে প্রকৃত ইসলামের সঠিক দিশা। ইমামের শুভজন্ম তাই সমগ্র মুসলিম জাতির মুক্তির স্মারক।

ইমামত লাভ

আবুল হাসানের বয়স যখন পঁয়ত্রিশ,তখন তার পিতা ইমাম মূসা কাযেম (আ) শাহাদাতবরণ করেন। শাহাদাতের পর তারি যোগ্য উত্তরসূরি ইমাম রেযা (আ) মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব প্রদানের গুরুভার গ্রহণ করেন। তার ইমামতির সময়কাল ছিল বিশ বছর। এই বিশ বছরে আব্বাসীয় তিনজন শাসক যথাক্রমে বাদশাহ হারুন এবং তার দুই পুত্র আমিন এবং মামুনের শাসনকাল অতিক্রান্ত হয়েছিল। ইমাম রেযা তার পিতা ইমাম মূসা (আ)এর নীতি-আদর্শকে অব্যাহত গতি দান করেন। ফলে ইমাম মূসার (আ) শাহাদাতের পেছনে যেই কারণগুলো দেখা দিয়েছিল,স্বাভাবিকভাবেই ইমাম রেযাও সেই কারণগুলোর মুখোমুখি হন। অর্থাৎ কায়েমি স্বার্থবাদি মহলের নেপথ্য রোষের মুখে পড়েন তিনি।

আব্বাসীয় রাজবংশে বাদশা হারূন এবং মামুনই ছিল সবচে পরাক্রমশালী এবং দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। তারা প্রকাশ্যে ইমামদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তির কথা বলে বেড়াতেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে ইমামদের রক্তের তৃষ্ণায় তৃষিত ছিলেন। ইমামদের প্রতি তাদের এধরনের আচরণের উদ্দেশ্য ছিল দুটো। এক,আলাভিদের আন্দোলনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া,এবং দুই শিয়া মুসলমানদের মন জয় করা।

ইমামদের সাথে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ থাকলে তাদের শাসনও বৈধ বলে গৃহীত হবে-এ ধরনের চিন্তাও ছিল তাদের মনে। কেননা ; মুসলমানরা যদি দেখে যে,হযরত আলীর (আ) পরিবারবর্গের প্রতি বাদশাহর সম্পর্ক বা যোগাযোগ রয়েছে,তাহলে তারা আব্বাসীয়দের শাসনকে বৈধ মনে করে খুশি হবে,ফলে তারা আর বিরোধিতা করবে না । এরফলে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে।

ইমাম রেযা (আ) শাসকদের এই অভিসন্ধিমূলক রাজনীতি বুঝতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব একটি কৌশল অবলম্বন করেন। তার কৌশলটি ছিল এমন,যারফলে একদিকে বাদশা মামুনের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হয়,অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের জনগণও প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। আর সেই সত্য হলো এই যে,আল্লাহর বিধান অনুযায়ি ইসলামী খেলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকার কেবলমাত্র নবী পরিবারের পবিত্র ইমামগণের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং তারা ব্যতীত কেউ ঐ পদের যোগ্য নয়।

জনগণের মাঝে এই সত্য প্রচারিত হলে স্বাভাবিকভাবেই তারা বাদশার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে-এই আশঙ্কায় মামুন ইমাম রেযাকে (আ) সবসময়ই জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। শুধু ইমাম রেযা কেন প্রায় সকল ইমামকেই এভাবে গণবিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যে উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকরা তাদেরকে কঠোর প্রহরার মধ্যে রাখার ষড়যন্ত্র করে। তারপরও ইমামদের সুকৌশলের কারণে তাদের বার্তা জনগণের কাছে ঠিকই পৌঁছে যায়।

শাহাদাতের সিঁড়ি বেয়ে যে ইসলাম জমিয়েছে পাড়ি

কালের যাত্রায় আজো তা বিশ্বময় দীপ্তিমান

নবীবংশীয় ইমামতের সুদীপ্ত ধারায়

আর জনগণের কাছে ইমামগণের বার্তা পৌঁছে যাবার ফলে জনগণ প্রকৃত সত্য বুঝতে পারে,এবং নবীবংশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে। বিশেষ করে বাদশা মামুনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ইমাম রেযা যখন দাঁড়িয়ে গেলেন,তখন ইরাকের অধিকাংশ লোক মামুনের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। হযরত আলীর (আ) খান্দানের কেউ বাদশাহর বিরুদ্ধে গেলে বাদশাহী যে হারাতে হবে-এই আশঙ্কা মামুনের মধ্যে ছিল। যার ফলে মামুন একটা আপোষনীতির কৌশল গ্রহণ করে।

বাদশাহ মামুন ইমামকে খোরাসানে আসার আমন্ত্রণ জানায়। ইমাম প্রথমত রাজি হন নি,কিন্তু পরবর্তিকালে তাকে আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছে । বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বসরা অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি তার গতিপথ পরিবর্তন করে ইরানের দিকে পাড়ি দেন। উল্লেখ্য যে,নবীবংশের মধ্যে ইমাম রেযাই প্রথম ইরান সফর করেন। যাই হোক,যাত্রাপথে তিনি যেখানেই গেছেন জনগণ তাকে সাদরে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে।

ইমামও নবী করিম (সা),তার আহলে বাইত ও নিষ্পাপ ইমামদের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য এবং ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। সেইসাথে তার সফরের উদ্দেশ্য অর্থাৎ বাদশাহর আমন্ত্রণের কথাও তাদেরকে জানান। চতুর বাদশাহ মামুন ইমামের আগমনে তার সকল সভাসদ এবং অন্যান্য লোকজনকে সমবেত করে বলেন,হে লোকেরা ! আমি আব্বাস এবং আলীর বংশধরদের মধ্যে অনুসন্ধান করে দেখেছি,আলী বিন মূসা বিন রেযার মতো উত্তম লোক দ্বিতীয় কেউ নেই। তাই আমি চাচ্ছি যে,খেলাফতের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেব এবং এই দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত করবো।

ইমাম,মামুনের রাজনৈতিক এই দুরভিসন্ধি সম্পর্কে জানতেন। তাই তিনি জবাবে বললেন,মহান আল্লাহ যদি খিলাফত তোমার জন্যে নির্ধারিত করে থাকেন,তাহলে তা অন্যকে দান করা উচিত হবে না। আর যদি তুমি আল্লাহর পক্ষ থেকে খেলাফতের অধিকারি না হয়ে থাক,তাহলে আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব কারো উপর ন্যস্ত করার কোনো অধিকার তোমার নেই। ইমাম শেষ পর্যন্ত মামুনের কথায় খেলাফতের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় মামুন ইমামকে তার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার হতে বাধ্য করে। ইমাম রেযা (আ) শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা গ্রহণ করেন। শর্তগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ছিল এরকম-এক,তিনি প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না।

দুই,দূরে থেকে তিনি খেলাফতের সম্পর্ক রক্ষা করবেন। তিনি কেন এ ধরনের শর্তারোপ করেছিলেন,তার কারণ দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রদত্ত তার মোনাজাত থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি মুনাজাতে বলেছিলেন - হে খোদা ! তুমি ভালো করেই জানো,আমি বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সুতরাং আমাকে এজন্যে পাকড়াও করো না। যেমনিভাবে তুমি ইউসূফ ও দানিয়েল (আ)কে পাকড়াও করো নি। হে আল্লাহ ! তোমার পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যতিত আর কোনো কর্তৃত্ব হতে পারে না। আমি যেন তোমার দ্বীনকে সমুন্নত রাখতে পারি,তোমার নবীর সুন্নতকে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি ।

ইমাম রেযার এই দায়িত্ব গ্রহণের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে আব্বাসীয়রা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তারা ভেবেছিল,খেলাফত বুঝি চিরদিনের জন্যে আব্বাসীয়দের হাত থেকে আলীর (আ) বংশধরদের হাতে চলে গেল। তাদের দুশ্চিন্তার জবাবে বাদশা মামুন তার মূল অভিপ্রায়ের কথা তাদেরকে খুলে বলেন। তা থেকেই বোঝা যায়,যেমনটি আয়াতুল্লাহ উজমা খামেনেই বলেছেন,ইমামকে খোরাসানে আমন্ত্রণ জানানো এবং তার পরবর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পেছনে মামুনের মূল উদ্দেশ্য ছিল,শিয়াদের বৈপ্লবিক সংগ্রামকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা। যাতে তাদের উত্তাল রাজনীতিতে ভাটা পড়ে যায়।

দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি ছিল আব্বাসীয় খেলাফতকে বৈধ বলে প্রমাণ করা। তৃতীয়ত,ইমামকে উত্তরাধিকার বানানোর মাধ্যমে নিজেকে একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও মহান উদার হিসেবে প্রমাণ করা। তো মামুনের এই অভিসন্ধির কথা জানার পর আব্বাসীয়রা ইমামকে বিভিন্নভাবে হেয় ও মর্যাদাহীন করে তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ ইমামকে তারা কিছুতেই অপদস্থ করতে পারে নি।

বাদশা মামুন একবার তার সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তরের আসরে ইমামকে আমন্ত্রণ জানালেন। সেখানে ইমাম কোনো এক প্রেক্ষাপটে মামুনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিমত দেন। এতে বাদশা ভীষণ ক্ষেপে যান এবং ইমামের বিরুদ্ধে অন্তরে ভীষণ বিদ্বেষ পোষণ করতে থাকেন। এইভাবে ইমামত,জনপ্রিয়তা,খেলাফত,আলীর বংশধর প্রভৃতি বিচিত্র কারণে বাদশাহ ইমামের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতে থাকে। পক্ষান্তরে জনগণ উপলব্ধি করতে পারে যে,খেলাফতের জন্যে মামুনের চেয়ে ইমামই বেশি উপযুক্ত।

تبصرہ ارسال

You are replying to: .